“রুহুল আমিনের কোন মৃত্যুভয় ছিল না। গত এক-দেড় বছরে সে ছিল একেবারে ভিন্ন এক ব্যক্তি। যদিও আমরা বাল্যকাল থেকে বন্ধু, তারপরও ওর জন্য আমার কোন সহানুভূতি নেই। কিন্তু তার পরিবারের জন্য আমার দুঃখ হয়।”
সিরিয়ায় ড্রোন হামলায় নিহত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি জিহাদি রুহুল আমিনের বাল্যবন্ধু স্টিফেন মারভিন বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া চলে যাওয়ার পরও রুহুল আমিনের সঙ্গে স্টিফেন মারভিনের যোগাযোগ ছিল।
“সিরিয়ায় চলে যাওয়ার পর প্রথম যখন আমি তাকে ফোন করি, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে গুলির শব্দ শুনতে পাই। রুহুল আমিন বলছিল যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার গুলির ভয় করে না? ও বলেছিল, আমি যদি মরি তো আল্লাহর কাছে চলে যাব। শুনে আমি বেশি ধাক্কা খেয়েছিলাম। ওর মধ্যে মৃত্যুর কোন ভয় ছিল না।”
রুহুল আমিন এবং রিয়াদ খান নামে দুই ব্রিটিশ জঙ্গীকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার কথা মাত্র গতকালই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এ নিয়ে এখন ব্রিটেনে রাজনৈতিক বিতর্কও চলছে। বিরোধী রাজনীতিকরা দাবি তুলেছেন, কিভাবে এই ড্রোন হামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার বিস্তারিত জনসমক্ষে প্রকাশ করতে।
রুহুল আমিনের জন্ম বাংলাদেশের মৌলভিবাজার জেলায়। কিন্তু বেড়ে উঠেছেন স্কটল্যান্ডের এবারডীনে।
২০১৪ সালের জুনে সিরিয়া থেকে ইন্টারনেটে আপলোড করা এক ভিডিওতে রুহুল আমিনকে দেখা যায় অপর দুই জঙ্গী রিয়াদ খান এবং নাসের মুথানার পাশে বসে থাকতে।
এবারডীনের বন্ধুদের ভাষ্য অনুযায়ী রুহুল আমিন একসময় ক্রিকেট খেলতেন। সঙ্গীত ভালোবাসতেন। নিয়মিত নাইট ক্লাবেও যেতেন। সিরিয়া যাওয়ার আগে কাজ করেছেন পিৎজা শপ, সেলুন এবং এক মশলার দোকানে।
স্টিফেন মারভিন জানিয়েছেন, রুহুল আমিন জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন বার্মিংহ্যামে আসার পর। “আমি শুনেছি যে ওর মগজ ধোলাই করা হয়েছে। বার্মিংহ্যামে কিছু লোকের সঙ্গে তার দেখা হয়। এরা তাকে সিরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।“
“সিরিয়ায় গিয়ে ও একটা ‘কোরান ক্যাম্পে’ যোগ দেয়। সেখানে তিন মাস ছিল। এরপর তাকে আরেকটা সামরিক ক্যাম্পে পাঠানো হয় তিন মাসের জন্য।”
স্টিফেন মারভিন বলেন, রুহুল আমিন যে এভাবে জঙ্গীতে পরিণত হলো, সেখানে তার পরিবারের কোন দোষ নেই।
বাল্যবন্ধুর এই পরিণতিতে আঘাত পেলেও বন্ধুর জন্য কোন সহানুভূতি নেই স্টিফেন মারভিনের। কারণ তিনি মনে করেন, গত এক-দেড় বছরে তার বন্ধু পুরোপুরি বদলে গিয়েছিলেন।
“ওর যা প্রাপ্য ছিল, সেটাই যে ও পায়নি, সেটা বলা খুব কষ্টকর হবে।”